Untitled

আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন ‌'সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে' মুখস্থ করেছি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনের তিনটি দীর্ঘশ্বাসের কথা জেনেছি বাংলার শিক্ষক অনিলকৃষ্ণ দত্তের কাছে। এক. মাইকেল রোজগার করতে চেয়েছিলেন কোটি-কোটি টাকা, তা হাজারে-হাজারেও হয়নি। দুই. হতে চেয়েছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ কবি, হলেন স্বল্পপ্রশংসিত বাংলা কবি মাত্র। তৃতীয় দীর্ঘশ্বাসের কথা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। এই দীর্ঘশ্বাসে বা ক্ষেদোক্তির মধ্যে অনেকটা বিনয় আছে। মাইকেল রোজগার করেছিলেন কিংবা করতে পারতেন, তবে তা ধরে রাখার চেষ্টা করেননি। আর স্বল্পপ্রশংসিত বাংলা কবি মাত্র নন, বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠকবি হিসেবেই ইংরেজদের কাছে তাঁর নাম পৌঁছে গেছে।

এই মাইকেলকে একদিন দেখার সৌভাগ্য হলো কদমবাড়ী গনেশ পাগলের মেলার মাঠের যাত্রামঞ্চে। সেই চুল, সেই দাড়ি, সেই ধোপদুরস্ত পোশাক, সেই উচ্চারণ। জীবনী পড়ে যে চেহারাচিত্র মনের মধ্যে এঁকেছি, তা থেকে ব্যত্যয় হয়নি। মাইকেল হেঁটে আসছেন, কথা বলছেন, জলচৌকির ওপর বসে তিন টিকিধারী পণ্ডিতকে ডিকটেশন দিয়ে একসঙ্গে তিনটি কাব্য লিখছেন। পণ্ডিতদের ভুল সংশোধন করে দিচ্ছেন। মহাকবি মাইকেলকে দেখে জনম সার্থক হয়ে গেল! অভাব-জর্জরিত মাইকেল যখন দেবকীর কাঁধে হাত রেখে যখন বললেন 'দেবকী তোমায় আমি দেব কী?' অলঙ্কারশাস্ত্রের পাঠ না থাকলেও 'দেবকী' আর 'দেব কী' শব্দের উচ্চারণ-সাজুয্য এবং অর্থ-ভিন্নতা আমার কানে তখনই সুধা বর্ষণ করে। আমি মাইকেলের কবিত্বের আকর্ষণ টের পাই আমার ভেতরে। শব্দের খেলায় মেতে উঠতে মাইকেল আমাকে ডাকে। মেলার মাঠের যাত্রামঞ্চ আমাকে ডাকে। ঘোরের মধ্যে ডুবতে-ডুবতে বাড়ি ফিরি।

পরদিন বিকেলে স্কুলের পাশের রাস্তায় শিশুকন্যার হাত ধরে দাঁড়িয়ে একজনকে কথা বলতে শুনি। ঠিক মাইকেলের কণ্ঠ। পাশের এক বন্ধু আঙুল তুলে বলে, 'আরে ওই তো কালকের মাইকেল! অমলেন্দু বিশ্বাস।'

অমলেন্দু আমার কাছে আজকেরও মাইকেল। যাত্রামঞ্চে মাইকেলকে দেখেছি। রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখেছি অমলেন্দুকে। অমলেন্দুই আমার জীবনের মাইকেল।

Rate this poem: 

Reviews

No reviews yet.