Untitled

নিন্দা হবে জানি--
তবু রাণী, তোমার দ্বারেই সাধবো সেতার খানি |
আঙুল আমার বশ মানেনা, সুর ফোটে না তারে,
অধীর আবেগ আঘাত শুধু করে বুকের দ্বারে ;
তুমি তারে গুছিয়ে বেঁধে বশ মানিয়ে নিয়ে
সফল করে' তোলো তোমার ভাবের আবেশ দিয়ে !
মর্ম্মরিয়া বাজুক সে তার মর্ম্মতারের মত
গুঞ্জরিয়া উঠুক বুকের গোপন ব্যথা যত ;
করুক লোকে কানাকানি, হাসুক যেবা হাসে-
তোমার চোখের দীপ্তিতে আজ দীক্ষা দেহ দাসে |

. শঙ্কা তোমার নাই-
নিভৃত যে কুটীর খানি গ্রামের সীমানায় ;
উদার মাঠে নদী পারের পথটি গেছে বাঁকা,
শিয়রে তার নিঃশ্বসিছে বুনো-ঝাউয়ের শাখা |
এদিক বড় লোক চলেনা, ভাবে - যে জন যায়-
এমন সাঁঝে মাঠের মাঝে গজল কে বাজায় !
পথিক জানবে কেমন ক'রে কে লাগায় সে সুর ;
কাহার দেওয়া ব্যথায় হেথা সেতার ভরপুর !
না-হয় হেথায় নাইক প্রাসাদ, যন্ত্রী নাই বা আছে,
একটি ভক্ত জাগে তবু একটি দেবীর কাছে !

. বিজন নদী তীর--
ঝাউ শাখাতে ঘনায় ধীরে নিশীথ সুনিবিড় ;
দুয়ার না হয় খোলাই থাকুক, কিসের ক্ষতি তায় !
ভয় কোর' না - ভৃত্য দ্বারে রইল প্রতীক্ষায় !
দখিন বায়ে গৃহচ্ছায়ে কাঁপছে যে দীপ খানি,
সেই কাঁপনের সুরটি ধরে' গমক যাবো টানি !
থরথরিয়ে কাঁপবে আঙুল , বক্ষ কাঁপবে সাথে,
অশ্রু কাঁপবে নয়ন-পাতে ব্যাকুল বেদনাতে |
মূর্চ্ছামগ্ন মৌন রাতি প্রহর বেড়ে যায়
ঝিঁঝির ঝুমুর সঙ্গে কাঁদে সেতার মূর্চ্ছনায় |

. বাতাস যদি থামে,--
ভোরের রাতে হঠাৎ ছাতে বাদল যদি নামে ;
দুয়ার ফাঁকে হাওয়ার হাঁকে প্রদীপ যদি নিবে !
ভক্ত তোমার বাহির দ্বারে, আগলটি কি দিবে !
দীপ নিবে যায়, কি ক্ষতি তায়-কি ফল বলো লাজে,
মল্লারেতে মীড় মিলিয়ে সেতার যে তার বাজে !
মেঘের পর্দ্দা ঘনায় যদি অন্ধ রাতের পরে,
কি প্রয়োজন, দুয়ার দেওয়া রইল কিনা ঘরে !
অশ্রু নামে বর্ষাসম - হায় গো রাণী হায়,
মুর্ত্তীমতী সিদ্ধি কি তার ফলবে সাধনায় |

. ঐরে এল আলো--
রক্ত ঊষা পরল ভূষা সাদার সাথে কালো |
বায়ুর কন্ঠে নাই গরজন, ভজন গাহে পাখী,
পূর্ব্বাচলের তোরণ দ্বারে অরুণ মেলে আঁখি ;
উদাস তব নয়ন-তারার পান্ডু করুণ ছবি-
এই বেলা তার সুর মিলিয়ে বাজারে ভৈরবী |
সাধক, তুমি সিদ্ধ আজি--পূর্ণ মনোরথ,
ওই সুরে তোর যায় রে দেখা নূতন সুরের পথ |
যে যা বলে বলুক লোকে ভক্ত তোরই জয়,
বাণীর সাথে বীণার আজি নিবিড় পরিচয়!

Rate this poem: 

Reviews

No reviews yet.