Untitled

আমিও তোমারি মত সৃজিয়াছি একখানি অপূর্ব্ব ভূবন,
সেথা রাত্রি নেমে আসে বক্ষে ল'য়ে বিরহের ব্যথা-গুঞ্জরণ
রিক্তা নিরাভরণার মত,
অঙ্গে ধরি' ব্যর্থতার ব্রত !
প্রেমের প্রাচুর্য্য দিয়া রচিয়াছি আকাশের মঙ্গল মহিমা,
ব্যথার লাবণ্য দিয়া আঁকিয়াছি শরতের প্রশান্ত নীলিমা.
রামধনু আঁকিয়াছি অস্ফুট চুম্বনে,
গগন-কম্পন-ব্যথা মুগ্ধ আলিঙ্গনে ;
অসংখ্য আশার ভাতি জ্বালায়েছি নয়নে তারার,
অশ্রু দিয়া গড়িয়াছি নবঘনপুঞ্জিত আষাঢ় !
যৌবনের ইচ্ছাখানি ছন্দি তুলি জলদের কম্পন-আনন্দে ;
মনের নিকুঞ্জতল পুঞ্জ পুঞ্জ বেদনার কেতকী-সুগন্ধে
আন্দোলিয়া উঠিছে উতলি' ;--
আকাঙ্ক্ষার বিহঙ্গ-কাকলী !
যেমন তুমি হে কবি, রচিয়াছ এ সুন্দর সৃষ্টির কবিতা,
আপন আনন্দ-ছন্দে মেলিয়াছ নব নব বর্ণ-বিলাসিতা, --
তেমনি আমিও কবি, আমার কল্পনা
আঁকে নিত্য আনন্দের শুভ্র আলিম্পনা !

নিত্য মায়া-মহোত্সব আমার সে মর্ম্মরিত মর্ম্মের জগতে,
প্রিয়া সেথা চিরযাত্রী পল্লব-হিল্লোল-ফুল্ল ফাল্গুনের রথে---
গানের কুসুম দিয়া সেথা নিত্য মাল্য-বিচরন,
ব্যথিত বুকের গৃহে সেথা মোর বাসক-শয়ন,
সেথা নিত্য আশা যায় বুনি'
আকাশের ফুলের ফাল্গুনী !

আমিও তোমার মত হে মায়াবী শিল্পকার, হে ক্ষ্যাপা খেয়ালী,
বেদনার রসায়নে রচি নিত্য আনন্দের দীপের দেয়ালি ;
অন্তর ব্যঞ্জনা দিয়া মঞ্জুল করেছি মোর মনের মঞ্জুষা ,
সেথা রাত্রি-অবসানে দেখা দেয় তনুগাত্রী জ্যোতির্ম্ময়ী ঊষা ;
সেথা সূর্য্য-সন্তানের নব নব জন্মের উত্সব,
আলোকের স্তোত্রে স্তোত্রে আনন্দের মন্ত্র-কলরব ;
সেথা ফোটে প্রেমের মালতী,
তাই সেথা অরুণ-আরতি !
যেমন তুমি গো তারপর
ভেঙে ফেল' স্বপ্ন-খেলা-ঘর,
ধূলির সঞ্চয় কাড়ি' নিঃসম্বল কর ধরণীরে,
সৃষ্টির কবিতাখানি অবহেলে ফেলে' দাও ছিঁড়ে ;
তেমনি আমিও একদিন
অশান্ত, বিরক্ত, তৃপ্তিহীন--
দারুণ হেলার ভরে চূর্ণ করি আনন্দ-লেখনী,
দীর্ঘশ্বাসে ভস্ম করে দিয়ে যাই স্বপ্নের বিপণি !

দুইজনে ভয়ঙ্কর, বীভত্স, নিষ্ঠুর,
শুধু ছবি আঁকি বসে জীবন মৃত্যুর !
আমার ভুবনে আমি তোমা মত খুসী-ক্ষ্যাপা স্রষ্টা ভগবান,
কাহারে বঞ্চিত করি, বক্ষ ভরি' কাহারে সর্ব্বস্ব করি দান |

মিলন-চুম্বন কা'রে, কাহারে বা আতপ্ত বিরহ,
কা'রে দগ্ধ মরুভূমি, কা'রে বর্ষা-স্নিগ্ধ অনুগ্রহ !
আমার খেয়াল মত গান গাহি ভৈরবী বিভাসে,
ধন্য করি কা'রে প্রেমে , খিন্ন করি কা'রে দীর্ঘশ্বাসে ;
কা'রে কন্টকের মালা, কা'রে বা মাধবী,
যাহা খুশি দান করি তোমা-সম, কবি !
আমিও তোমারি মত পাইয়াছি অমূল্য সে স্বর্ণ-সিংহাসন,
রাত্রি দিন সেথা বসি' মূল্যহীন রাজত্বের করি আয়োজন ;
অকারণে বসে' বসে' ক্ষণিকের ক্ষণপ্রভা হানি,
তার পরে ইচ্ছা হ'লে মৃত্যুর গুন্ঠন দিই টানি'
একে একে মিশে' যায় মূল্যহীন স্বপ্নের বুদ্বুদ,
আতঙ্কে নিবিয়া যায় সৃষ্টির সে রহস্য-বিদ্যুৎ,
পড়ে' থাকে বিদীর্ণ বাঁশরী,
ভগ্ন যত ভাবের গাগরী ||

Rate this poem: 

Reviews

No reviews yet.