Untitled

অন্নদার দাস হয়ে হরিহোড় নাম লয়ে
বসুন্ধর ভূমিষ্ঠ হইল |
দেখিয়া পুত্রের মুখ বিষ্ণু হোড় পায় সুখ
পদ্মিনীর আনন্দ বাড়িল ||
ষষ্ঠি পূজা হৈল সায় ছয় মাসে অন্ন খায়
যুবা হৈল নানা দুঃখ পায়ে |
বনে মাঠে বেড়াইয়া কাঠঘুঁটে কুড়াইয়া
বেচিয়া পোষয়ে বাপ-মায়ে ||
এক দিন শূণ্য পথে অন্নপূর্ণা সিংহরথে
কুতূহলে ভ্রমিতে ভ্রমিতে |
জয়া বিজয়ার সঙ্গে কথোপকথন-রঙ্গে
হরিহোড়ে পাইলা দেখিতে ||
মনে হৈল পূর্ব কথা আপনি আসিয়া তথা
মায়া করি হইলেন বুড়ী |
কাঠ খড় জড়াইয়া সব ঘুঁটে কুড়াইয়া
রাখিলেন ভরি এক ঝুড়ি ||
হরিহোড় যেথা যান কাঠ ঘুঁটে নাহি পান
আট দিক আন্ধার দেখিলা |
বিস্তর রোদন করি হরি হরি স্মরে হরি
বুড়ীটিরে দেখিতে পাইলা ||
দেখেন বুড়ীর কাছে ঝুড়ি ভরা ঘুঁটে আছে
বোঝাবান্ধা কাঠ আছে তায় |
হরিহোড় কান্দি কহে বুড়ি মজাইল দহে
আজি বড় দেখি অনুপায় ||
কোথা হইতে আসি বুড়ী ঘুঁটে লয়ে ভরে ঝুড়ি
সর্বনাশ করিল আমার |
কাড়ি নিলে হবে পাপ বুড়ী পাছে দেয় শাপ
এ দুঃখের নাহি দেখি পার ||


বৃদ্ধ পিতা-মাতা ঘরে আকুল অন্নের তরে
ঘুঁটে বেচা আমার সম্বল |
কিছু ঘুঁটে না পাইনু মিছে বেলা মজাইনু
এ ছার জীবনে কিবা ফল ||
দয়া করি হরপ্রিয়া হরিহোড়ে ডাক দিয়া
ছল করি লাগিলা কহিতে |
কাঠঘুঁটে কুড়াইয়া রাখিয়াছি সাজাইয়া
অরে বাছা না পারি বহিতে ||
মঙ্গল হইবে তোর অতি দূরে ঘর মোর
ঘুঁটেগুলি যদি দেহ বয়ে |
অর্ধেক আমার হবে অর্ধেক আপনি লবে
দয়া করে চল মোরে লয়ে ||
হরিহোড় এত শুনি অর্ধলাভ মনে গুণি
মাথায় লইয়া ঘুঁটে ঝুড়ি |
বাতে কুঁজে বেঁকে বেঁকে লড়ী ধরে থেকে থেকে
আগে আগে চলিলেন বুড়ী ||
নিকটে হরির ঘর নহে অতি দূরতর
সাঁঝ কৈলা সেইখানে যেতে |
তাহারি উঠানে গিয়া বসিলেন হরপ্রিয়া
কহেন চলিতে নারি রেতে ||
কহিলা মধুর স্বরে থাকিলাম তোর ঘরে
হরি বলে এ হবে কেমনে |
ভাঙ্গা কুড়ে ছাওয়া পাতে বৃদ্ধ পিতা মাতা তাতে
ঠাঁই নাহি হয় চারি জনে ||
অতিথি আপনি হবে উপোসী কেমনে রবে
অন্নের সংযোগ মোর নাই |
হেন ভাগ্য নাহি ধরি অতিথি সেবন করি
এই বেলা দেখ আর ঠাঁই ||
এই দেখ বৃদ্ধ বাপ অন্ন বিনা পান তাপ
বৃদ্ধ মাতা অন্ন বিনা মরে |
গেল চারিপ'র দিন অন্ন বিনা আমি ক্ষীণ
যম-যোগ্য অতিথি এ ঘরে ||
হরির শুনিয়া বাণী কহেন হরের রাণী
আরে বাছা না ভাবিহ দুখ |
ভারত সান্ত্বনা করে অন্নদা আইল ঘরে
ইতঃপর পাবে যত সুখ ||

Rate this poem: 

Reviews

No reviews yet.